ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গা নেতা হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী সমিউদ্দীন বিপুল অস্ত্রসহ আটক 

রোহিঙ্গা নেতা হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী সমিউদ্দীন বিপুল অস্ত্রসহ আটক 

বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং মিয়ানমারের রাখাইন ষ্টেটের বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন আরসা’র মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিন'কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

মিয়ানমারের রাখাইন ষ্টেটে সশস্ত্র সংগঠন আরসার পক্ষে কাজ করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিল বলে র‌্যাবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য জানিয়েছেন গ্রেফতার নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিন।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

রবিবার রাতে উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবির সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি বিদেশি ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রাখছিলেন মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ। এসময় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসার সাথে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। একই সংগে আতাউল্লাহ জুনুনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বিরোধিতা করেন। এতে রাজি না হওয়ায় আতাউল্লাহ জুনুনি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাস্টার মুহিব্বুল্লাহর হত্যার দুদিন আগে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে বৈঠক করেন আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপ। দুদিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আরসার ১২ জন কিলার গ্রুপ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মুহিব্বুল্লাহর হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নুর কামাল জানান, মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে তার কার্যালয়ে যে গ্রুপ সরাসরি গুলি করে হত্যা করে সেই গ্রুপেই নুর কামাল উপস্থিত ছিলেন। গ্রেফতার নুর কামাল মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার ১৯ নাম্বার চার্জশিটভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছেন তিনি।

খন্দকার আল মঈন আরো জানান, নাইখ্যংছড়ি সীমান্তে মাদক বিরোধী অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা হত্যা এবং র‌্যাব সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় এই নুর কামাল জড়িত। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকজন মাঝি হত্যায়ও জড়িত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানায়, তার নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। সে ক্যাম্প-১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করতো। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃতে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান করতো। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন কিলার গ্রুপের সদস্য ও আরসার অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মাঝে সরবরাহ করতো। তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরোদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেনা।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে নিজ কার্যালয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ডহিউম্যান রাইটস এর সভাপতি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। উখিয়া থানা পুলিশ ২০২২ সালের ১৩ জুন ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনি সহ আরো ৭ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্তমানে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলাটি স্বাক্ষ্য গ্রহন পর্যায়ে রয়েছে।

রোহিঙ্গা,অস্ত্রসহ,সমন্বয়কারী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত